শাপলাকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছে প্রভা ও বিপ্লব। মাত্র বয়স আট বছর। কিন্তু রেগে গেলে হার মানায় বড়দেরকেও। কথায় কথায় রেগে যায়। আর রাগের মাথায় যা পায় তাই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। সেদিন কাঁচের গ্লাস ফেলে ঘর ভরিয়ে ফেললো কাঁচে। আর তা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রভার তো হাত কেটে রক্তারক্তি অবস্থা। কারো বাড়িতে নিয়ে গেলেও তাকে কন্ট্রোল করা যায়না। ঘর থেকে ওকে নিয়ে বাইরে বেরনোই ছেড়ে দিয়েছে প্রভা ও বিপ্লব। কী করবে কিছুই ভেবে পায়না, আর দিন দিন হতাশ হয়ে যাচ্ছে ওরা।
যাদের ঘরে খুদে দস্যিরা আছে তারা খুব ভালোভাবে জানেন শিশুরা রেগে গেলে বড়দের চেয়ে কোনো অংশে কম যায়না। আসলে খুব ছোটবেলা থেকেই রাগ, দুঃখ, অভিমান এই আবেগগুলির সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে। আর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা আমাদের আবেগ সংযত করতে শিখে যাই। ছোটদের মন থাকে অনেক কোমল। তাই অল্পতেই ওরা যেমন খুব খুশি হয়ে ওঠে তেমনভাবে সামান্য কারণে দুঃখ পায় কিংবা রেগে যায়। বেশিরভাগ শিশুই রাগ হলে চিৎকার করে কাঁদে, চেষ্টা করে নিজের দাবি আদায়ের। এটা খুব গুরুতর নয়। কিন্তু শিশু যদি রেগে গিয়ে জিনিসপত্র ছুঁড়ে মারে, বড়দের মারধোর করে কিংবা নিজেকেই আঘাত করে তখন কিন্তু সতর্ক হওয়া দরকার। কীভাবে সামলাবেন শিশুর রাগ? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
১। শিশু যদি অত্যাধিক রাগী হয় তাহলে এই ব্যাপারে পরিবারের ভূমিকাও কম নয়। প্রথমেই দেখুন বাসার অন্য কারো রাগের মাথায় চিৎকার করা বা জিনিসপত্র ভাঙ্গার অভ্যাস আছে কিনা। যদি তাই হয়, তাহলে আগে শোধরাতে হবে নিজেদের। শিশুরা সবসময় অনুকরণপ্রিয় হয়। তাই এই বিষয়ে সচেতন হন।
২। শিশু রেগে গেলে আপনিও ওর সঙ্গে রেগে গিয়ে তর্কাতর্কি বা ওকে মারধোর করতে যাবেন না। এতে আরও বেড়ে যাবে ওর রাগ। শিশুর যদি রাগের মাথায় জিনিসপত্র ছোঁড়ার বা ভাঙ্গার অভ্যাস থাকে তাহলে ওর হাতের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে রাখুন। রাগ করার মুহূর্তে ওকে গুরুত্ব দেবেন না। এতে ও বুঝতে পারবে রাগ করে কোনো লাভ হবে না।
৩। শিশু শান্ত হলে ওকে যুক্তি দিয়ে বোঝান কেন ওর দাবি আপনি মেনে নেননি। বোঝানোর সময় নিজেকে খুব শান্ত ও সংযত রাখুন। মনে রাখবেন আমরা বড়রা যত সহজে যুক্তি মানি, ছোটরা তত সহজে তা মানবে না। তাছাড়া যা আপনার কাছে তুচ্ছ বিষয়, তাই শিশুর কাছে হয়তো অনেক বড় ব্যাপার। ওর যুক্তিগুলোও মন দিয়ে শুনুন। ওকে বোঝার চেষ্টা করুন।
৪। সন্তান যখন ফুরফুরে মেজাজে থাকবে তখন ওকে গল্পের ছলে বোঝান অত্যাধিক রাগ খুব খারাপ একটা অভ্যাস। রাগের নেতিবাচক দিকগুলো ওকে বুঝিয়ে বলুন।
৫। সন্তান খুব রাগী হলে তাকে মেডিটেশনের অভ্যাস করান। এতে মন শান্ত হয় এবং আবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ আসে।
৬। যখন দেখবেন শিশু খুব সামান্য কারণে ঘনঘন রেগে যায় এবং কোনোভাবেই তাকে শান্ত করা সম্ভব হয়না, তখন প্রয়োজন হতে পারে কাউন্সিলিং্যের।