লাইফস্টাইল

দাম্পত্যসঙ্কট

দাম্পত্য মানে ভালোবাসার এক অমোঘ বন্ধন। দাম্পত্য মানেই স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে নিস্প্রান ঘর আর আসবাবপত্রের সমষ্টিকে একটা শান্তির ঘর বানিয়ে তোলা। একসঙ্গে স্বপ্ন দেখা, হাসি-কান্না ভাগ করে নেওয়া, সন্তানকে মানুষ করা – এরই নাম দাম্পত্য। কিন্তু তারপরও দুটো মানুষ সবসময় সব বিষয়ে যে একমত হবেন তা কিন্তু নয়। দুজনের মানসিক গঠন যেহেতু আলাদা তাই চাহিদার ফারাক থাকাটাও খুবই স্বাভাবিক। সেই কারণেই মাঝেমাঝেই দাম্পত্যে দেখা দেয় সঙ্কট। সঙ্কট আর সুখ দাম্পত্যের দুই অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সুখ সবার সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে আনন্দ পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনের সঙ্কট ক’জনই বা মুখ ফুটে বলতে পারেন? দাম্পত্যের নানা জটিলতা এবং তার সমাধান নিয়ে সিরিজ আলোচনা – দাম্পত্যসঙ্কট।

সিরিজ-২
কেন দেখা দেয় দাম্পত্যসঙ্কট?


১। মনের মিলের অভাব
মনের মিল শব্দটা আসলেই খুব গোলমেলে। বয়ঃসন্ধির সময় হতে রোম্যান্টিক সিনেমা-গল্প-উপন্যাসের হাত ধরে বড় হতে হতে আমাদের মনে গেঁথে যায় যে মনের মিলই বুঝি কোনো সম্পর্কের প্রথম এবং শেষ শর্ত। কিন্তু মনের মিল আসলে কী? স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের ভাবনাচিন্তা এক হওয়া? সব বিষয়ে দুজনের একমত হওয়া? নাকি একে অপরের মনের কথা বুঝতে পারা? ব্যবহারিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যেতে পারে, দাম্পত্যের ক্ষেত্রে মনের মিল এক বিশেষ ধরণের বোঝাপড়া যা স্বামী-স্ত্রীকে কাছাকাছি নিয়ে আসে এবং তাদের একসঙ্গে থাকার রসদ যোগায়। বেশিরভাগ দম্পতির জীবনেই অমিল, পাওয়া-না পাওয়া থাকেই। তারপরও তাদের সংসারে তা তেমন প্রভাব ফেলে না। তাই মনের মিলের অভাব যে সব দম্পতির দাম্পত্যে সঙ্কট ডেকে আনবে তা কিন্তু নয়। তবে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য দেখে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীর দিকে আকৃষ্ট হয়েছিলেন, পরে সংসার করতে গিয়ে সেটা ব্যবহারিক জীবনে পাচ্ছেন না। নয়তো বিয়ের আগের কয়েকটি দেখায় ঠিকঠাক মানুষটিকে চিনে উঠতে পারেননি। কিংবা ভেবেছিলেন বিয়ের পর তাকে আপনার মনের মতো করে গড়ে নেবেন। আর বাস্তবে তা একদমই অসম্ভব হওয়ায় দেখা দিয়েছে মতের অমিল। আর তা থেকেই তৈরি হয়ে যেতে পারে দাম্পত্যসঙ্কট।
২। পরিস্থিতি বা পারিপার্শ্বিক কারণ
স্বামী বা স্ত্রীর মধ্যে অনেকসময় সেরকম বড় কোনো সমস্যা থাকে না। কিন্তু দেখা যায় যে শ্বশুরবাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে মেয়ে ঠিকমতো মানিয়ে নিতে পারছে না কিংবা শাশুড়ি ছেলের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি নাক গলাচ্ছেন। আবার শাশুড়ি বউমার সঙ্গে ছেলের সামনে একরকম আর পেছনে আরেক রকম ব্যবহার করছেন। ছেলে বউ নিয়ে আলাদা সংসারও করতে চায় না। তখনই শুরু হয়ে যায় স্বামি-স্ত্রীর দাম্পত্যসঙ্কট।
৩। তৃতীয় ব্যক্তি
দাম্পত্যের মতো একান্ত ব্যক্তিগত সম্পর্কে তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ মানেই বিপদ সংকেত। এক বা একাধিক বন্ধুবান্ধব বা আত্নীয়ের সঙ্গে স্বামী বা স্ত্রীর ঘনিষ্টতা থাকতেই পারে। কিন্তু কোথায় সেই ঘনিষ্টতার সীমারেখা? আমরা যতই উদার হই না কেন, নিজেদের ব্যক্তিগত গন্ডির মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ কেউই মেনে নিতে পারিনা। স্বামী বা স্ত্রীর সাময়িক মোহের কারণেই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাম্পত্যে তৃতীয় ব্যক্তির প্রবেশ ঘটে যায়। দাম্পত্যে একঘেয়েমির কারণেও মাঝে মাঝে ঢুকে যায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তি। আর তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ এতটাই ভয়াবহ যে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দাম্পত্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
৪। পারিবারিক অত্যাচার
বাড়ির এক বা একাধিক সদস্য মিলে যখন কোনো সদস্যের উপর শারীরিক, মানসিক নির্যাতন চালায় তখন সেটাকেই পারিবারিক অত্যাচার হিসাবে ধরা হয়। যদিও নারী পারিবারিক হিংসার শিকার হন বেশি কিন্তু পুরুষেরাও যে এই অত্যাচারের বাইরে তা ভাববেন না। ভয় দেখিয়ে, অপমানিত করে, লজ্জা দিয়ে, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করে, মারধোর করে অত্যাচারী সদস্যরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন যে, নির্যাতিত বক্তিটি নিজের অজান্তেই হার মানতে বাধ্য হন। পারেন না আর দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে।
৫। শারীরিক সমস্যা
যৌন সমস্যা দাম্পত্যে ফাটল ধরায় খুব তাড়াতাড়ি। দাম্পত্যের এক বিশেষ অনুভূতি শরীরী প্রেম। সেই শরীর যখন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন দাম্পত্য প্রভাবিত হবেই। যৌন চাহিদার পার্থক্য, ইমপোটেন্স, ফ্রিজিডিটির মতো যৌনসমস্যা দাম্পত্যসঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বেডরুমের চার দেয়ালের মধ্যে তৈরি হয় এক তিক্ত, প্রেমহীন পরিবেশ। বেশিরভাগ দম্পতি যদিও এই তিক্ততাকে সঙ্গী করেই জীবন কাটিয়ে দেন। তবে কিছু কিছু দম্পতির সম্পর্ক আবার এই কারণে একেবারে ভেঙ্গেও যায়।