পশুপ্রেমী মানুষদের অনেক গল্প শোনা যায়। বিশেষ করে পথের অসহায় পশুদের জন্য অনেকেই প্রাণপাত করেন বা বহু কষ্ট সহ্য করেন। কিন্তু তা বলে পথের কুকুর-বিড়ালদের উদ্ধার করতে আস্ত বিমান ভাড়া নেওয়ার কথা শুনলে তো তাজ্জব হতে হবেই। তাও আবার যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে।
হ্যাঁ, আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পথে ঘোরাফেরা করা অসহায় কুকুর ও বিড়ালদের উদ্ধার করে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যেতে আস্ত বিমান ভাড়া করে ফেলেছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ সামরিক আধিকারিক পল পেন ফার্থিং। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি থেকে তাঁর আশ্রমের প্রায় ২০০ কুকুর-বিড়াল সরিয়ে নিতে পাঁচ লাখ ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪ কোটি টাকা) দিয়ে একটি বিমান ভাড়া করেছিলেন তিনি। কিন্তু তাঁর বিমান আকাশে ওড়ার আগেই কবুল বিমানবন্দরের বাইরে জোড়া বিস্ফোরণ ঘটে। ফলে বাতিল হয়ে যায় তাঁর বিমান। ফলে তাঁর আশ্রিত পোষ্যদের নিয়ে তিনি ফের ফিরে গিয়েছেন সেই আশ্রমে।
টুইটারে পল জানান, বিস্ফোরণের আগেই বিমানবন্দরের ভেতরে কুকুর-বিড়ালদের নিয়ে কাবুল ছাড়ার অপেক্ষা করছিলেন পল। শেষ মুহূর্তে বাইডেন প্রশাসন কাবুল ছাড়ার ক্ষেত্রে নিয়মে পরিবর্তন আনে। ফলে ওই দিন তাঁর কাবুল ছাড়ার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। বিমানবন্দর ছাড়ার সময় বিস্ফোরণের কবলে পড়েন তিনি। এই জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে কাঠগড়ায় তুলেছেন প্রাক্তন ব্রিটিশ আধিকারিক। ৫২ বছরের এই সামারিক কর্মকর্তা দীর্ঘদিন ধরেই কাবুলে থাকেন। সেখানেই পোষা প্রাণীদের একটি আশ্রম চালাতেন সাবেক ব্রিটিশ নৌ কর্মকর্তা পল পেন ফার্থিং।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বিমান বাতিল হলেও পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফের নতুন বিমান পাঠাবে ওই সংস্থা। তখনই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে তাঁর প্রিয় পোষ্যদের নিতে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবেন। তিনি কেন ব্রিটিশ সরকারের সহায়তায় বিমানবন্দর ছাড়লেন না? এই প্রশ্ন উঠলে পল জানান, কাবুল বিমানবন্দর এখন মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রণে। তাই তাদের নিয়মই মানতে বাধ্য হয়েছেন।
তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখল নেওয়ার পর থেকেই পথের অসহায় প্রাণীদের উদ্ধার করে পল কাবুলের কাছেই তাঁর আশ্রমে রাখতেন। সেখানেই তাদের দেখাশোনা করতেন কিছু কর্মী ও পরিবারের সদস্যরা। এসব প্রাণীকে যুদ্ধবিধ্বস্ত কাবুলে ছেড়ে না আসার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন পল। তাই শেষমেষ নিজেই বিমান ভাড়া করে তাদের নিয়ে কাবুল ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন পল। তাঁর কথায়, কাবুলে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে বেঘোরে প্রাণ হারাতে হয় ওই অসহায় প্রাণীদের।
সূত্রের খবর, নিরাপত্তা ইস্যুতেই পলের ভাড়া করা ওই বিমান বাতিল করা হয়েছে। এর বদলে আরেকটি বিমান দেওয়া হবে পলকে। তবে পল বিমানবন্দরে ঢোকার অনুমতি না পেলে বিমানটি কাবুলে অবতরণ করবে না বলে জানা গিয়েছে। আপাতত সেই চেষ্টা করছেন প্রাক্তন এই ব্রিটিশ নৌসেনা কর্তা।
