রোববারের পাতা

বাংলা উপন্যাসে মহামারি

স্বকৃত নোমান

গোটা পৃথিবী করোনার ভয়াবহ দুর্যোগ অতিক্রম করছে। একটি অবরুদ্ধ সময় পার করছে। মানবজাতির জন্য এই অভিজ্ঞতা সম্ভবত প্রথম। এর আগে পৃথিবীতে বহুবার মহামারি এসেছে, কিন্তু পৃথিবীর মানুষ সম্ভবত কখনো একই সঙ্গে এমন মহামারির মুখোমুখি হয়নি। সম্ভবত, কারণ, প্রাগৈতিহাসিক কালের কথা আমরা জানি না। হয়ত প্রাগৈতিহাসিক কালেও এমন কোনো মহামারি নেমেছিল পৃথিবীতে। মানুষ হয়ে পড়েছিল মানুষ থেকে পৃথক। মানুষের যূথবদ্ধতা ভেঙে দিয়েছিল মহামারি। কিন্তু ইতিহাসে আমরা এমন মহামারির কথা পাই না, যে মহামারি একই সঙ্গে গোটা পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

মহামারি বাঙালির কাছে নতুন কিছু নয়। মহামারি যুগে যুগে কালে কালে এসেছে বাংলা-ভারতে। কখনো প্লেগ নামে, কখনো কলেরা নামে, কখনো সোয়াইন ফ্লু, কখনো বার্ড ফ্লু, আর কখনো এইডস নামে। এই বাংলায় আগে যেসব মহামারি আসত, আমাদের পূর্বপুরুষরা সেসব মহামারির নাম দিয়েছিল ওলাবিবি, ঝোলাবিবি, মড়িবিবি। ব্যাধির বীজভরা কুঁজ নিয়ে তারা আসতো দোর্দণ্ড প্রতাপে। মরণদণ্ড ঘোরাতে ঘোরাতে বিরাণ করে দিতো জনপদের পর জনপদ। কত গ্রাম, কত গঞ্জ, কত নগর যে বিরান হয়ে পড়েছিলো, তার কোনো শুমার ছিলো না। বাঙালি তাকে ‘মহামারি’ বলত না, বলত ‘মড়ক’। সেসব মড়কের কথা উঠে এসেছে বাংলা উপন্যাসেও।

আধুনিক বাংলা সাহিত্যের আদিপুরুষ বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ’ উপন্যাসে আমরা ছিয়াত্তরের মন্বন্তর-কালীন মহামারির বর্ণনা পাই। যেমন : ‘রোগ সময় পাইল। জ্বর, ওলাউঠা, ক্ষয়, বসন্ত। বিশেষত বসন্তের বড় প্রাদুর্ভাব হইল। গৃহে গৃহে বসন্তে মরিতে লাগিল। কে কাহাকে জল দেয়, কে কাহাকে স্পর্শ করে। কেহ কাহার চিকিৎসা করে না; কেহ কাহাকে দেখে না; মরিলে কেহ ফেলে না। অতি রমণীয় বপু অট্টালিকার মধ্যে আপনা আপনি পচে। যে গৃহে একবার বসন্ত প্রবেশ করে, সে গৃহবাসীরা রোগী ফেলিয়া পলায়।’

১৯১৪ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস ‘চতুরঙ্গ’। এই উপন্যাসের উদার ও ঋজু চরিত্রের জ্যাঠামশাই জগমোহন মারা যায় মহামারিতে। রবীন্দ্রনাথের বর্ণনায় : ‘পাড়ায় প্লেগ দেখা দিল। পাছে হাসপাতালে ধরিয়া লইয়া যায় এজন্য লোকে ডাক্তার ডাকিতে চাহিল না। জগমোহন স্বয়ং প্লেগ-হাসপাতাল দেখিয়া আসিয়া বলিলেন, ব্যামো হইয়াছে বলিয়া তো মানুষ অপরাধ করে নাই।’

নিজের উদ্যোগে তখন প্রাইভেট হাসপাতাল খুললেন জগমোহন। শচীশ, শ্রীবিলাস, এরাই ছিল শুশ্রুষার কাজে, সঙ্গে ছিলেন জনৈক ডাক্তারও। যদিও তাদের ভাগ্য প্রসন্ন হয়নি। শ্রীবিলাসের উক্তি : ‘আমাদের হাসপাতালে প্রথম রোগী জুটিল একজন মুসলমান, সে মরিল। দ্বিতীয় রোগী স্বয়ং জগমোহন, তিনিও বাঁচিলেন না। শচীশকে বলিলেন, এতদিন যে ধর্ম মানিয়াছি আজ তার শেষ বকশিশ চুকাইয়া লইলাম, কোনো খেদ রহিল না।’ দাদার মৃত্যু নিয়ে শচীশের বাবা হরিমোহনের বক্তব্য ছিল অতি সংক্ষিপ্ত : ‘নাস্তিকের মরণ এমনি করিয়াই হয়।’

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’ উপন্যাসের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল ১৯১৮ সালে। রাজলক্ষ্মীর থেকে বিদায় নিয়ে বর্মাদেশে (মিয়ানমার) যাচ্ছে শ্রীকান্ত। কলকাতার জাহাজঘাটায় পৌঁছে দেখতে পায় সার বেঁধে দাঁড়িয়ে চৌদ্দ-পনেরো শ’ মানুষ। কৌতূহলবশে সে জিজ্ঞেস করল তাদের একজনকে। যেমন : ‘একজন হিন্দুস্থানীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, বাপু, বেশ তো সকালে বসেছিলে, হঠাৎ এমন কাতার দিয়ে দাঁড়ালে কেন?

সে কহিল, ডগদরি হোগা?

ডগদরি পদার্থটি কী বাপু?

লোকটি পিছনের একটা ঠেলা সামলাইয়া বিরক্তমুখে কহিল, আরে, পিলেগকা ডগদরি।’

এই ‘পিলেগ’ যে আসলে প্লেগ, তা তখনো বোঝেনি শ্রীকান্ত। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য সে আরও খোঁজখবর করে জানে, ‘বর্মায় এখনও প্লেগ যায় নাই, তাই এই সতর্কতা। ডাক্তার পরীক্ষা করিয়া পাশ করিলে তবেই সে জাহাজে উঠিতে পাইবে।’

প্লেগের পরীক্ষা কেমন, তাও প্রত্যক্ষ করে শ্রীকান্ত। যেমন : ‘সকলেই অবগত আছেন, প্লেগ রোগে দেহের স্থান বিশেষ স্ফীত হইয়া উঠে। ডাক্তারসাহেব যেরূপ অবলীলাক্রমে ও নির্বিকার-চিত্তে সেই সকল সন্দেহমূলক স্থানে হস্ত প্রবেশ করাইয়া স্ফীতি অনুভব করিতে লাগিলেন, তাহাতে কাঠের পুতুলেরও আপত্তি হইবার কথা।’

জাহাজ যেদিন রেঙ্গুন পৌঁছবে সেদিনই সকালে শ্রীকান্ত দেখল যে, সমস্ত লোকের মুখে ভয় ও চাঞ্চল্য। শরৎচন্দ্রের বর্ণনায় : ‘পরদিন বেলা এগার-বারটার মধ্যে জাহাজ রেঙ্গুন পৌঁছিবে; কিন্তু ভোর না হইতেই সমস্ত লোকের মুখচোখে একটা ভয় ও চাঞ্চল্যের চিহ্ন দেখা দিল। চারিদিক হইতে একটা অস্ফূট শব্দ কানে আসিতে লাগিল, কেরেন্টিন। খবর লইয়া জানিলাম, কথাটা quarantine : তখন প্লেগের ভয়ে বর্মা গভর্নমেন্ট অত্যন্ত সাবধান। শহর হইতে আট-দশ মাইল দূরে একটা চড়ায় কাঁটাতারের বেড়া দিয়া খানিকটা স্থান ঘিরিয়া লইয়া অনেকগুলি কুঁড়েঘর তৈয়ারি করা হইয়াছে; ইহারই মধ্যে সমস্ত ডেকের যাত্রীদের নির্বিচারে নামাইয়া দেওয়া হয়। দশদিন বাস করার পর, তবে ইহারা শহরে প্রবেশ করিতে পায়।’

রেঙ্গুন সরকারের নিয়ম অনুসারে নতুনদের কিছুদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়, যদিও সেই আইন কুলিদের জন্যই, ভদ্রলোকের জন্য নয়। যেমন : ‘যে-কেহ জাহাজের ভাড়া দশ টাকার বেশি দেয় নাই, সেই কুলি।’ জনৈক ডাক্তার শ্রীকান্তকে জানান, ‘Quarantine-এ নিয়ে যেতে এরা মানুষকে এত কষ্ট দেয় যে গরু-ছাগল-ভেড়াকেও এত কষ্ট সইতে হয় না।’

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পণ্ডিতমশাই’ উপন্যাসেও মহামারির প্রসঙ্গ এসেছে। গ্রামের একমাত্র পুকুরে কলেরা রোগীর পোশাক ধোওয়া হতে থাকে পণ্ডিতমশাই বৃন্দাবনের চোখের সামনে। এই পুকুর সারা গ্রামের জলের চাহিদা যোগায়। ফলে সেই জল পান করে গ্রামে মড়ক লাগে। তিনি গ্রামে কলেরা দূর করতে বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করছেন। শরৎচন্দ্রের লেখায় : ‘সেদিন তারিণী মুখুয্যের দুর্ব্যবহারে ও ঘোষাল মহাশয়ের শাস্ত্রজ্ঞান ও অভিসম্পাতে অতিশয় পীড়িত হইয়া বৃন্দাবন গ্রামের মধ্যে একটা আধুনিক ধরনের লোহার নলের কূপ প্রস্তুত করাইবার সঙ্কল্প করে। যাহার জল কোন উপায়েই কেহ দূষিত করিতে পারিবে না এবং যৎসামান্য আয়াস স্বীকার করিয়া আহরণ করিয়া লইয়া গেলে সমস্ত গ্রামবাসীর অভাব মোচন করিয়া দুঃসময়ে বহু পরিমাণে মারীভয় নিবারণ করিতে সক্ষম হইবে…।’ কিন্তু ঠিক তখনই ঘরে তাঁর মা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের সন্তানকেও কলেরায় হারান পণ্ডিতমশাই।

ঔপন্যাসিকর বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসেও মহামারির বর্ণনা এসেছে। ‘আরণ্যক’ উপন্যাসে নায়ক সত্যচরণের মুখে সেই বিবরণ শোনা যাক : ‘সেবার শুয়োরমারি বস্তিতে ভয়ানক কলেরা আরম্ভ হইল, কাছারিতে বসিয়া খবর পাইলাম। শুয়োরমারি আমাদের এলাকার মধ্যে নয়, এখান থেকে আট-দশ ক্রোশ দূরে, কুশী ও কলবলিয়া নদীর ধারে। প্রতিদিন এত লোক মরিতে লাগিল যে, কুশী নদীর জলে সর্বদা মড়া ভাসিয়া যাইতেছে, দাহ করিবার ব্যবস্থা নাই।’

কাছারির কিছু লোককে সঙ্গী করে সত্যচরণ সেই বস্তিতে যায়, ভেবেছিল, ‘এইসব ডাক্তার-কবিরাজশূন্য স্থানে দেখি যদি কিছু উপকার করিতে পারি।’ সেখানে রাজু পাঁড়েও উপস্থিত ছিল, সে সত্যচরণকে বাড়িগুলি ঘুরিয়ে দেখায়। সত্যচরণের কথায়, ‘কি ভয়ানক দারিদ্র্যের মূর্তি কুটিরে কুটিরে। সবই খোলার কিংবা খড়ে বাড়ি, ছোট্ট ছোট্ট ঘর, জানালা নাই, আলো-বাতাস ঢোকে না কোনো ঘরে। প্রায় সব ঘরেই দু-একটি রোগী, ঘরের মেঝেতে ময়লা বিছানায় শুইয়া। ডাক্তার নাই, ওষুধ নাই, পথ্য নাই।’

মুমূর্ষু স্বামীকে দেখবার কেউই নেই স্ত্রী ছাড়া। সেই কুটিরে গেছে সত্যচরণ। রোগীর তখন শেষ অবস্থা, শয্যার পাশে তার স্ত্রী। এমন সময় সত্যচরণের চোখে পড়ে : ‘তাকের উপর একটা আঢাকা পাথরের খোরায় দুটি পান্তা ভাত। ভাতের উপর দু-দশটা মাছি বসিয়া আছে। কী সর্বনাশ! ভীষণ এশিয়াটিক কলেরার রোগী ঘরে, আর রোগীর নিকট হইতে তিন হাতের মধ্যে ঢাকাবিহীন খোরায় ভাত।’

গ্রাম্য স্ত্রীলোকের খাদ্য সেই ভাতই। সত্যচরণ তাকে বলে, ‘যাও, এখুনি ফেলে আসো’। স্ত্রীলোকটি ভয়ে ভয়ে তা ফেলেও আসে। আরও কিছু বাড়িতে ঘুরে সত্যচরণ বুঝতে পারে, এখানে সংক্রামক রোগ ঠেকানো প্রায় অসম্ভব। ভাগ্যে যার মৃত্যু আছে, তার হবেই। সেই মুমূর্ষু স্বামীটি তো আগেই মারা গেছিল, তার বউটিও একদিন মারা যায়। খবর শুনে নিজের আক্ষেপ জানাচ্ছে সে : ‘আমার মনে কষ্ট রহিয়া গেল যে, আমি তাহাকে তাহার মুখের অত সাধের ভাত দুটি খাইতে দিই নাই। ’

ঔপন্যাসিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ধাত্রীদেবতা’ উপন্যাসের নায়ক শিবনাথকেও কলেরা আক্রান্তের সেবা করতে গিয়ে নানান বিরুদ্ধতার শিকার হতে হয়েছে। বৃন্দাবনের মতো একই দৃশ্য দেখতে হয়েছে তাকেও। ‘অস্পৃশ্য’দের সেবা করা নিয়েও হতে হয়েছে সামাজিক প্রতিরোধের শিকার। গ্রামের ব্রাহ্মণ্যতন্ত্র রেহাই দেয়নি।

‘গণদেবতা’ উপন্যাসে কলেরার বিস্তৃত উল্লেখ করেছেন তারাশঙ্কর। নায়ক দেবনাথ যুবক সঙ্গীদের নিয়ে অনেক চেষ্টা করেছিল গ্রামে ছড়িয়ে-পড়া কলেরা রুখতে। তার ছোট ছেলেকেও ধরেছিল সংক্রমণ, সে-খবর দেবনাথ পায় প্রতিবেশিনী দুর্গার কাছে। লেখকের বর্ণনায় :

“হ্যাঁ, দুর্গাই। অন্ধকার পথের উপর আলো হাতে দুর্গাই দাঁড়াইল।

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে দুর্গা বলিল, ‘হ্যাঁ, বাড়ী এস শীগগির। খোকার অসুখ করেছে, একেবারে জলের মতন।’

দেবু বিদ্যুৎস্পৃষ্টের মতো একলাফে পথে নামিয়া ডাকিল, ‘ডাক্তার!’

শুধু খোকা নয়, কলেরায় মারা যায় খোকার মা বিলুও। ‘দেবু পাথরের মত অশ্রহীন নেত্রে নীরব নির্বাক হইয়া সব দেখিল, বুক পাতিয়া নিদারুণ আঘাত গ্রহণ করিল। বিলুর সৎকার যখন শেষ হইল, তখন সূর্যোদয় হইতেছে।”

তারাশঙ্করের ‘আরোগ্য নিকেতন’ উপন্যাসে দেখা যায় যে, ‘শিক্ষিত ছেলেরা’ বিশুদ্ধ পানীয়জলের ব্যবস্থা করে কলেরায় মৃত্যু আটকাতে চাইছে। কুয়ো খুঁড়তে কোদাল ঘাড়ে নিয়েছে। তাদের নাম হয়েছে ‘কোদালি ব্রিগেড। সেবাব্রতের সঙ্গী তারা। কলেরার মড়ক থেকে গ্রাম বাঁচাতে তৎপর। লেখক জানাচ্ছেন, ‘শুকনো পুকুরের তলায় কুয়ো কেটে তার জল বের করলে। তাই তো! কথাটা তো কারুর মনে হয়নি! স্যানিটারি ইনস্পেক্টরেরা পুকুরে ব্লিচিং পাউডার গুলে দিয়ে জলকে শোধন করলে। অ্যান্টি-কলেরা ভ্যাকসিন ইনজেকশন দিলে। কলেরার টিকে!’

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’ উপন্যাসের নায়ক শশী চেয়েছিল নিজের গ্রামেই থেকে যেতে, চেয়ছিল দুঃখী মানুষগুলোর সেবা করতে। গাওদিয়া গ্রামের প্রকৃতি ছিল নিষ্করুণ, গ্রামের অন্যতম বিপদ ছিল মহামারি। প্রায়ই ছড়িয়ে পড়ত কলেরা, টাইফয়েড, কালাজ্বর ও বসন্তের মতো রোগগুলো। শশী তার সাধ্যের সীমা অবধি চেষ্টা করেছিল, কাউকে কাউকে সারিয়েও তুলেছিল, কিন্তু তার একার পক্ষে কতদূর সম্ভব? গ্রামের মানুষেরা নিমজ্জিত ছিল অশিক্ষায়, কুসংস্কারে। স্বাস্থ্যবিধির কোনো নিয়মই তারা জানত না, জানালেও পালন করত না। গাওদিয়ার বর্ষা ও বসন্ত ঋতু তাই সুন্দর ছিল না। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় আর্দ্র-কর্দমাক্ত পল্লিকে দেখেছেন ‘জীবাণুর তীর্থ’ হিসেবে; শশী ডাক্তারের কাছে গাওদিয়া গ্রাম ছিল অনন্ত নরক-পর্যটন।

জহির রায়হানের ‘হাজার বছর ধরে’ উপন্যাসে কলেরার মড়ক বর্ণিত হয়েছে এভাবে : ‘অবশেষে আরও আট দশটি প্রাণ হরণ করে তবে গ্রাম থেকে বিদায় নিলেন ওলা বিবি।’ ‘আগুনপাখি’ উপন্যাসে মেতর বউ-এর জবানীতে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন, ‘এত রোগের নামও ত্যাকন জানত না লোকে। ডাক্তারবদ্যিও ছিল না তেমন। মরবার আগে মুখে যেদি ওষুধ পড়ত, তাই কত! পেরায় পিতি বছর কলেরা-বসন্তেই কত যি লোক মরত, তার সীমাসংখ্যা নাই।’

হয়ত বাংলা ভাষার অন্য ঔপন্যাসিকদের উপন্যাসেও মহামারি প্রসঙ্গ এসেছে নানাভাবে। এই করোনা মহামারি নিয়েও নিশ্চয়ই ভবিষ্যতে বাংলা ভাষার ঔপন্যাসিকরা লিখবেন। এই মহামারির বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরবেন পরবর্তীকালের পাঠকদের জন্য।